হাওরে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিন
- আপলোড সময় : ০৮-০১-২০২৫ ১২:০৩:২২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০১-২০২৫ ১২:০৩:২২ পূর্বাহ্ন
প্রতি বছর হাওরে অপরিকল্পিতভাবে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে কারণে সময়মতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলমগ্ন জমিতে কৃষকরা চারা রোপণ করতে পারে না। পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য বিভিন্ন উপজেলার হাওরগুলোতে খনন কাজ করা হয়ে থাকে। বিগত সরকারের আমলে জামালগঞ্জের ছোট-বড় ৭টি হাওরের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ ব্যাহত না হওয়ার জন্য খনন কাজ করতে প্রায় কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু খননের নাম করে বরাদ্দের বেশিরভাগ অর্থ লোপাট হয়। দায়সারা খনন ও পানি নামার পয়েন্টগুলোতে নজর না দেওয়ায় একাধিক হাওরের বেশ কয়েকটি অংশে পানি সরছে না। জামালগঞ্জের ছোট-বড় ৭টি হাওরের প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৩৪২ জন কৃষকের বোরো আবাদ করতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৯ মেট্রিক টন। জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ না হওয়ার শঙ্কা কৃষকের। উপজেলার বোরো আবাদের ভান্ডার খ্যাত হালি ও পাগনা হাওরের বেশ কিছু জায়গা পানি নিষ্কাশন না হওয়ার চিত্র দেখা গেছে।
অপরিকল্পিত খনন ও পানি চলাচলের উৎসস্থল শুকিয়ে যাওয়াসহ নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায় হাওরের অনেক জায়গা এখনও ডুবন্ত অবস্থায় আছে। এনিয়ে গত ৭ জানুয়ারি দৈনিক সুনামকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পাগনার হাওরের জলাবদ্ধতা রোধে শান্তিপুর-সেলিমগঞ্জ বাজার ও ভুতিয়ারপুর অংশে যে খনন হয়েছে তাতে উপকৃত হয়নি কৃষক। নামমাত্র খননের পর তীরে ফেলা মাটি খননকৃত স্থানে গিয়ে পড়েছে। তাই খনন হওয়া স্থান ফের ভরাট হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। এদিকে পাগনার হাওরে ক্ষত সৃষ্টিকারী কানাইখালী নদীর এ ধারা দিয়ে পানি ঠিকভাবে নামতে পারছে না। গতবছর উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে গজারিয়া স্লুইস গেইট অংশে খনন করা হয়েছিল। পানি চলাচলের সাময়িক পথ করা হলেও এবছর সে অংশ ফের ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। পাগনার হাওরের কানাইখালি পর্যন্ত বিস্তৃত একসময়ের গজারিয়া নদী বর্তমানে পলি পড়ে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া পাগনার হাওরে পানি নিষ্কাশনের আরেকটি পথ ডালিয়া স্লুইস গেইটও সেরকম পানি টানতে পারছে না। পিয়াইন নদীর পানি নামার উৎসস্থলে নির্মিত স্লুইস গেইট অনেকটা ভরাট ও খনন হীনতায় রয়েছে। জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা নিয়ে বিস্তৃত হালির হাওরের মামুদপুর থেকে আছানপুর পর্যন্ত হেরাকান্দি ও কেছইড়া বিল অংশের বিশাল জমি এখনও জলমগ্ন রয়েছে। কৃষকগণ বাধ্য হয়ে নিজেদের খরচে মামুদপুর ও হেরাকান্দি অংশের বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশনের পথ করেছে।
স্থানীয় কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে জমি চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য যতই চেষ্টা করুক না কেন সময়মতো বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারবে কি না এনিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। জলমগ্ন জমিতে জবুথবু কৃষকদের বুকে হাহাকার সৃষ্টি হচ্ছে। এই অপরিকল্পিত খনন এবং কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির যেন শেষ নেই। সময়মতো হাওর থেকে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এবং কৃষকরা ধানের চারা রোপণ করতে না পারার কারণে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এর দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট হাওরে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ